Our Activities
ছানি হচ্ছে চোখের একটি সমস্যা বা অসুখ, যার ফলে চোখের লেন্স ধীরে ধীরে অস্বচ্ছ, ঘোলা বা সাদা হয়ে যায়। এতে করে রোগীর দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। সময়মত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ভয় থাকে। আমাদের দেশে প্রতি বছর বহু মানুষ ছানিজনিত রোগে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলছে, যেটা সঠিক সময়ে সুচিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ ও বয়সজনিত কারণে চোখে ছানি দেখা দিতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। অস্ত্রপচার বা অপারেশন ব্যতিত কোনো ঔষুধে ছানি রোগ ভালো হয় না। ছানি রোগের শুরুতে চশমা দ্বারা দৃষ্টিশক্তি কয়েক বৎসর স্বাভাবিক রাখা যায়। ক্রমেই ছানি পরিপক্ক হতে থাকে এবং দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে, ফলে চশমা ব্যবহারে উপকার হয় না। কোনো কোনো ছানি রোগী বাতির আলো বা চাঁদের আলো ২-৭টি পর্যন্ত দেখতে পায়। ছানি প্রথমে এক চোখে দেখা দেয়। অন্য চোখ ভালো থাকায় রোগী নিজে ও পরিবারের সদস্যরা তা বুঝতে সক্ষম হয় না। চক্ষু চিকিৎসকের কাছে গেলে তখন বিষয়টি ধরা পরে।
বর্তমানে ছানি রোগীর অপারেশন করার সময় চোখের লেন্স ফেলে দেওয়া হয় এবং কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়, ফলে দৃষ্টিশক্তি পুনরায় স্বাভাবিক হয়। এ অপারেশনে তেমন কোনো ঝুঁকি থাকে না ফলে সহজেই স্বল্প খরচে অপারেশন করা যায়। অপারেশনের ১-২ ঘন্টার মধ্যে রোগীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া যায়। আর্থিক সামর্থ্য না থাকা, হাসপাতাল ও সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা না থাকা, পরিবার কর্তৃক সঠিক পরিচর্যার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে প্রচুর মানুষ ছানি রোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ভিউ ফাউন্ডেশন “সাইট ফর অল” প্রজেক্টের আওতায় দরিদ্র ছানি রোগীদের শনাক্ত এবং বিনামূল্যে অপারেশন করে থাকে। ২০২২ সালে টাঙ্গাইল ও মুন্সিগঞ্জ জেলার সর্বমোট ২৭১ জন দরিদ্র ছানি রোগীর চোখে সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করেছে। ভিউ ফাউন্ডেশন ২০২৩ সালে টাঙ্গাইল জেলার করটিয়ায় “ভিউ ফাউন্ডেশন চৌধুরী এ্যান্ড হোসেন চক্ষু হাসপাতাল” স্থাপন করতে যাচ্ছে, যেখানে দরিদ্র রোগীদের জন্য বিনামূল্যে এবং আর্থিক স্বচ্ছল চক্ষু রোগীদের জন্য স্বল্প খরচে উন্নতমানের ছানি অপারেশন ও অন্যান্য চক্ষু রোগের চিকিৎসা করবে।
“ভিউ ফাউন্ডেশন চৌধুরী এ্যান্ড হোসেন চক্ষু হাসপাতাল” এর মাধ্যমে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও সিরাজগঞ্জ জেলার দরিদ্র ছানি রোগীদের বিনামূল্যে এবং আর্থিক স্বচ্ছল ব্যক্তিদের স্বল্পমূল্যে অপারেশন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দরিদ্র, অসহায় এবং সুবিধাবঞ্চিত এসকল মানুষের জন্য যাকাত, সাধারণ দান এবং নিজস্ব তহবিল থেকে ভিউ ফাউন্ডেশন বিনামূল্যে ছানি অপারেশন এবং চক্ষু সেবার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এ কাজের জন্য ভিউ ফাউন্ডেশনের কোনো বিদেশি অনুদান নেই।
সাধারণত ছানি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকায় বহু মানুষ সময়মত চক্ষু চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হন। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলের মানুষজন ছানি রোগের সম্মুখীন হয়ে থাকে এবং যথাযথ চিকিৎসা ও অস্ত্রপচারের অভাবে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ভিউ ফাউন্ডেশন “সাইট ফর অল” প্রজেক্টের আওতায় দেশের বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে চক্ষু শিবির আয়োজন করে থাকে। যেখানে চক্ষু শিবির আয়োজন করা হয় তার চতুর্দিকে ৫-৭ বর্গমাইল এলাকায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ভিউ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি এলাকায় ১দিন ব্যাপি চক্ষু শিবির আয়োজন করা হয়।
নির্ধারিত দিনে ভিউ ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষিত দক্ষ ও অভিজ্ঞ চক্ষু প্যারামেডিক্স ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ অস্থায়ী ক্যাম্প এলাকায় প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামাদি নিয়ে অবস্থান করে এবং দিনব্যাপী প্রচেষ্টায় বিনামূল্যে ছানি রোগী চিহ্নিত করে থাকে। চিহ্নিত ছানি রোগীদের চোখের প্রেসার, ব্লাড প্রেসার, নেত্রনালী ও ব্লাড সুগার বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরিক্ষা সাপেক্ষে চূড়ান্ত বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত রোগীদের পরেরদিন মাইক্রোবাসে বা অন্য কোনো পরিবহনযোগে ভিউ ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত চক্ষু হাসপাতালে অপারেশনের জন্য নিয়ে আসা হয়। অতঃপর দরিদ্র রোগীদের যাকাত, সাধারণ দান এবং ভিউ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে বিনামূল্যে ছানি অপারেশন এবং অপারেশন পরবর্তী চক্ষু সেবার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে অপারেশন পরবর্তী কালো চশমা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ। ক্যাম্প এলাকায় অপারেশনকৃত ছানি রোগীদের অন্তত একবার ফলোআপ ভিজিট ইত্যাদি। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক/সার্জন দ্বারা অপারেশনের IOL বা কৃত্রিম লেন্স সংযোজন করা হয়। যাদের আর্থিক সামর্থ আছে তারা নিজ খরচে ভিউ ফাউন্ডেশনের চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে ছানি অপারেশন করিয়ে থাকেন। একটি ছানি অপারেশনের খরচ ৫০০০ টাকার বেশি নয়।